Monday 20 July 2015

বাবার চশমা

                 লিওর পছন্দ অপছন্দ ভারী অদ্ভুত । অন্তত বড়দের বোধগম্য নয় অনেক সময় । এই তো কদিন থেকে দেখা যাচ্ছে লিয়র অন্যতম প্রিয় খেলনা হচ্ছে বাবার চশমা ! বাচ্চাদের চশমার প্রতি একটা আকর্ষণ থাকেই । তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কিন্তু লিয়র বাবার কাছে যেটা অবাক লাগে যে লিও কতটা আগ্রহের সাথে চশমাটা ধরতে চায় । এর একটা বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা ভাবে লিয়র  বাবা । সাধারণত যা কিছু ধরতে মানা, তার প্রতি বেশি আগ্রহটাই স্বাভাবিক । যেহেতু লিয়র বাবা চশমাটা চট করে দিতে চায় না ছেলেকে, লিয়র তাই চশমার প্রতি একটা বাড়তি আকর্ষণ আছে । তবু লিয়র বাবার মনটা খচখচ করে, ব্যখাটা কাছাকাছি হলেও অসম্পূর্ণ মনে হয় তার । কারণ চশমা ছাড়াও অন্য অনেক কিছু আছে যা সহজে দেওয়া হয় না লিযকে, অথবা দিলেও খুব চটপট নিয়ে নেযা হয় । এইতো সেদিন, ল্যাপটপের power supply তারটাকে মুখে পোরার চেষ্টা করছিল । ছেলের বুদ্ধি নাকি ব্যপারটা কাকতালীয়, লিও power chord -টা নিজে থেকে বের করে মুখে পুরতে যাচ্ছিল । সেই দৃশ্য দেখে লিয়র  বাবা দুই হাত দূরে চেয়ার থেকে এক ঝাঁপে লিয়র মুখ থেকে সেই তার বের করে একটা কড়া  বকুনি দিল, আর তারটাকে যথাস্থানে গুঁজে দিল ।লিও যে তারপর কোনোদিন সেই তারটাকে ধরতে চায় নি তা নয়, লিয়র বাবার মতে চশমার প্রতি আগ্রহের তীব্রতাটা অনেক বেশি ।

                এর মধ্যে লিয়র গ্লাসগোতুতো জ্যেঠু ওরফে N-দা হাসপাতলে ভর্তি হলো । বৃহদন্ত্রের শেষ অংশটা কেটে বাদ দিতে হলো infection ছড়িয়ে পরবার আগেই ।এখন ভালো আছে N-জ্যেঠু, আগের থেকে অনেকটা সুস্থ, হাসপাতাল থেকেও বাড়ি ফিরে এসেছে । তাই এই রবিবার লিয়র বাবারা সবাই মিলে N-জ্যেঠুকে দেখতে গেল । সেখানে সন্ধ্যেটা কাটিয়ে লিয়রা যখন ফিরল, লিও এক ঘুম দিয়ে দিয়েছে গাড়িতে । তেল মেখে চান করবার সময় এটা লিয়র । মা তাই এসেই চানের সরঞ্জাম করতে লেগে পড়ল । লিয়র বাবা এসে দক্ষিণ দিকের জানলাটা খুলে লিযকে কোলে নিয়ে দাঁড়ালো । লিয়র চোখে ঘুম-ঘুম, আর পারলে লিয়র বাবাও একটু গড়িয়ে নেয় । এই জানলাটা লিয়র খুব প্রিয়, অনেক পাখি দেখা যায় । কিন্তু এখন সব পাখিই যে যার বাসায় ফিরে গেছে । লিয়র বাবা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল লিও একটা স্মিত হাসি নিয়ে বাবার দিকে চেয়ে আছে । ক্ষনিকের জন্য লিয়র বাবার মনে হলো লিও বুঝি চশমাটা চাইছে । ক্লান্ত পিতা চশমাটা আজকে নিজে থেকেই খুলে হাতে ধরল । কিন্তু লিও চশমাটা নিল না ! হাসি মুখে চেয়ে রইল বাবার দিকে । তবে কি লিও কিছু বলতে চাইছে ? তুচ্ছ চশমা নয়, দিনের শেষে লিয়র চোখে মুখে সেদিন যেন অন্য কথা ছিল ।
 


Saturday 11 July 2015

লিওর car seat

লিয়র সন্ধ্যেগুলো একদম ছকে বাঁধা । শনি আর রবিবার ব্যাতিক্রম ঘটে মাঝে মাঝে, কিন্তু বাকি পাঁচটা দিন খুবএকটা নিয়মের নড়চড় হয় না । বিকেলে ঘুম-এর পর কখনো মা-এর সাথে বাইরে বেড়িয়ে এসে, dinner খেয়ে, তেল মালিশ। ততক্ষণে বাবাও চলে আসে office থেকে । বাবার চান করানোর পরে খেলা, একটু chu chu tv, বা বাচ্চাদের কোনো animation movie. যখন চোখে ঘুম ঘুম, কথায় কথায় কোলে উঠতে ইচ্ছে করছে, তখন মুখে চুসি দিয়ে সোজা শোয়ার ঘরে । সেখানে বিছানায় আরেকটু খেলে, গরম দুধ খেতে খেতেই চোখ জুড়িয়ে আসে লিওর । বাবা (কখনও মা) তখন মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই লিও স্বপ্নরাজ্যে ।

তবে আজকের সন্ধ্যেটা একটু অন্যরকম হলো । অত সুন্দর রোদ দেখে মা লিযকে নিয়ে সামনের পার্কে বেড়াতে নিয়ে গেল । ফেরার পথে লিও দেখল বাবা হাজির ! বাড়ির সামনে গাড়ি নিয়ে বাবা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে, এখন নাকি লিওরা আবার বেরোবে  ! বেড়াতে লিওর  খারাপ লাগে না, কিন্তু ওই car-seat-এ বসতে লিয়র মোটেও ভালো লাগে না । বাবার নতুন গাড়িতে যদিও বেশ আরাম করে যাওয়া যায়, কিন্তু পেছন দিকে মুখ করে বসতে লিয়র একদম ভালো লাগে না । বেশিক্ষণ লাগলো না, বাবার গাড়িটা কয়েকটা traffic light পেরিয়েই কয়েকটা বাঁক নিয়ে থেমে গেল । একদিক থেকে ভালই হলো, এই বার বার মাথা ঘুরিয়ে দেখতে লিয়র ভীষণ বিরক্তি লাগে । গাড়ি থামতেই বাবা এসে লিয়কে  অপছন্দের সিট থেকে তুলে নিল কোলে । অাহ্ ! লিও কোলে থাকতে বড়  ভালবাসে । কিন্তু একি, মা এসে সেই সিট-টাকে তুলে সামনের সিট-এ করে দিল । তার মানে কি লিও এইবার সামনের সিটে  বসে যাবে ? কিন্তু সেই তো উল্টো করেই বসতে হবে । কিন্তু না, আপাতত গাড়ির দরজা বন্ধ করে লিযকে নিয়ে লিও-র বাবা মা একটা দোকানে ঢুকলো । এই দোকানে লিও আগেও এসেছে । এখানে লিও-র মত বাচ্চাদের অনেক কিছু পাওয়া যায়, নাম হলো mothercare । ঢুকতেই  মা হনহন করে ভিতরের দিকে চলে গেল । বাবাও আমাকে নিয়ে  হেলতেদুলতে মা-এর পিছু পিছু চলল । দূর থেকে দেখল মা একজন  দোকানদারের সাথে কি যেন একটা জিনিস নিয়ে কথাবার্তা বলছে, কাছে গিয়েই লিও টের পেল এটা  তো আরেকটা car seat ! তবে কি লিও-রা নতুন car seat কিনতে এলো ? লিওর আশা এইটা যেন সামনের দিকে মুখ করা হয় । বেশিক্ষণ গেল না, লিওরা দোকানের বাইরে বেরিয়ে এলো, আর সঙ্গে ওই দোকানদারটা। ওনার হাতে সেই নতুন car seat! ভদ্রলোক আর বাবা মিলে সেই car seat লাগিয়ে একে অপরকে করমর্দন করে লিয়র  দিকে হাসিমুখে চাইল । লিওর চোখে মুখে তখন একটা প্রশ্নচিহ্ন। মাযের কোল থেকে নিয়ে বাবা যেই বসাতে গেছে লিযকে  নতুন car seat-এ, লিও ছিটকে বেরিয়ে যেতে চাইল, লিও আবার গাড়ির উল্টোদিকে মুখ করে বসবে না । কিন্তু বাবার শক্ত হাত থেকে বেরোনও মুশকিল । কিছুক্ষন কোস্তাকুস্তির পরে লিও বুঝতে পারল এই car seat টা তো অন্যরকম, বেশ অনেকটা লম্বা, আর সবচেয়ে বড়  কথা সামনের দিকে মুখ করা ! লিও নিশ্চিন্ত যে এইবার থেকে তাহলে সামনের দিকে মুখ করেই বসবে সে , বাকিদের মতো । আসলে বাকিদের থেকে একটু উঁচুতে, নরম গদিতে, যেটা ঘুমানোর সময় হেলিয়ে দেওয়া যায়, আবার সোজা করেও বসানো যায় । বাড়ি ফেরার পথেই নিশ্চিন্ত লিও একটু ঘুমিয়ে নিল । বাড়ি ফিরে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন লিয়র তেল মালিশ করার সময় অনেকক্ষণ পেরিয়ে গেছে ।







Friday 10 July 2015

লিওর জন্য

আমি ঠিক কোনো অ্যাঙ্গেল-ই লেখক নই । তবে ভাবার কমতি নেই । রাত্তিরে ঘুম ভেঙ্গে গেল, লোডশেডিং হয়েছে, মাথার মধ্যে কিছু ভাবনা খেলতে লাগলো। যেন ভাবনাটাই এমন মাথা চারা দিয়ে উঠলো যে ঠেলা দিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে দিল । আসল কারণ কিন্ত গরম ! সে যাই হোক, ভাবনা যেমনই  হোক, সেটাকে লিপিবদ্ধ করবার ইচ্ছে মাঝে মধ্যে হলেও কোনদিনও লিখে ওঠা হয় নি । হয়ত প্রয়োজন বোধ করি নি । এটা একটা অদ্ভুত সংঘাত, একদিকে আমি নাকি বাউন্ডুলে, কারণের ধার-ধারি  না,  অন্যদিকে সব ব্যপারেই  প্রয়োজনের ঢাল ব্যবহার করি ।  এই লেখার পেছনেও দুটো বোধই  কাজ করছে -- লেখাটা লিখছি আমার আট মাসের ছেলের জন্য। এটা কারণ,আর অকারণটা  হলো বাংলায় কিছু লেখার ইচ্ছে ।

লিও (Leo) সারাদিন ধরে কি করবে বুঝতে পারে না । লিওর বাবাও বোঝে না যে ছেলেটা ঠিক কি চায় । তাই আজকে লিওর  বাবা একটা নতুন খেলা খেলল । সেটা কি? সেটা হলো লিওর সামনে বড়দের মত আচরণ করা । ধরা যাক এই যে লেখা (তখন যদিও আমি খাতা কলম নিয়ে লিখছিলুম ) সেটাও লিওকে দেখানোর জন্য শুধুমাত্র, যাতে ওর মধ্যে একটা কৌতুহল তৈরী হয় পেন নিয়ে লেখার মধ্যে । বলা বাহুল্য সেটা প্রথমে লেখা কম, আঁকিবুকি বেশি হবে ! কিন্তু কোথায় কি ? শেষমেষ যেটা লিও করছে সেটা হলো পাতাগুলোকে দুমড়ে মুচড়ে দলা পাকিয়ে খাওয়ার চেষ্টা ! এই আমাকে ধরেছে এবার ! আশা করছি নজরে এসেছে যে বাবা এই লম্বা সরু একটা ছোট ডান্ডা দিয়ে সাদা পাতার উপরে কি যেন করছে । সে গুড়ে বালি ! আপাতত নজর বাবার চশমার দিকে ! ওই ঘুরে তাকাল, আমাকে নানাভাবে বোঝাচ্ছে যে  "চল উঠি, কি করছ বসে বসে?" । আমিও যে নাছোরবান্দা...